ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার

- তথ্য প্রযুক্তি কম্পিউটার (Computer) | - | NCTB BOOK
350
350

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার হলো এমন কম্পিউটার যা বৈদ্যুতিক এবং মেকানিক্যাল উপাদানের সংমিশ্রণে তৈরি করা হয়েছিল। এই ধরনের কম্পিউটার আধুনিক ডিজিটাল কম্পিউটারের পূর্ববর্তী ধাপ হিসেবে গণ্য হয় এবং এটি ১৯৩০ থেকে ১৯৪০-এর দশকের মধ্যে ব্যবহৃত হতো। ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারগুলি জটিল গণনা, সংকেত প্রক্রিয়াকরণ, এবং ডেটা টেবুলেশন করার জন্য ব্যবহৃত হতো।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য:

  • মেকানিক্যাল উপাদান: এই ধরনের কম্পিউটারগুলো গিয়ার, রিলে (relay), এবং অন্যান্য মেকানিক্যাল অংশ ব্যবহার করত, যা সংকেত পাঠানো এবং প্রসেসিং করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
  • বৈদ্যুতিক উপাদান: কম্পিউটারগুলো বৈদ্যুতিক সংকেত এবং সুইচিং ব্যবস্থার মাধ্যমে কাজ করত, যা রিলে এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক কম্পোনেন্টের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতো।
  • গতি: ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের গতি ছিল সীমিত, কারণ মেকানিক্যাল অংশগুলির কারণে প্রক্রিয়াকরণের সময় বেশি সময় লাগত। তবে তা ঐ সময়ের ম্যানুয়াল গণনার চেয়ে অনেক দ্রুত ছিল।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের উদাহরণ:

  • Zuse Z3 (১৯৪১): জার্মান প্রকৌশলী কনরাড সুজ (Konrad Zuse) উদ্ভাবন করেছিলেন Z3 কম্পিউটার, যা ছিল প্রথম সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার। এটি গিয়ার এবং রিলে ব্যবহার করে ডিজিটাল গণনা করতে সক্ষম ছিল এবং প্রোগ্রামেবল ছিল।
  • Harvard Mark I (১৯৪৪): হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এবং আইবিএম-এর সহযোগিতায় হাওয়ার্ড এইকেন (Howard Aiken) উদ্ভাবন করেছিলেন Harvard Mark I, যা ছিল একটি বড় আকারের ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার। এটি গাণিতিক সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধান করতে পারত এবং এর আকার ছিল একটি বড় কক্ষের সমান।
  • Enigma Machine: ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারগুলির আরেকটি উদাহরণ ছিল এনিগমা মেশিন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান কোডিং ব্যবস্থাকে ভাঙার জন্য ব্যবহৃত হতো।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের কার্যপ্রণালী:

  • কম্পিউটারটি মেকানিক্যাল অংশগুলোকে বৈদ্যুতিক সংকেত দিয়ে সক্রিয় করত। রিলে এবং গিয়ারগুলোর মাধ্যমে সংকেত প্রক্রিয়াকরণ করা হতো এবং এটি বিভিন্ন গাণিতিক কাজ সম্পন্ন করত।
  • কম্পিউটারগুলো সাধারণত বুলিয়ান লজিক ব্যবহার করে প্রোগ্রামিং করা হতো, যা কম্পিউটারকে শর্তসাপেক্ষ অপারেশন করার ক্ষমতা দিত।
  • টেপ বা ছিদ্রযুক্ত কার্ডের মাধ্যমে ইনপুট দেওয়া হতো, যা কম্পিউটারের প্রোগ্রাম এবং ডেটা সরবরাহ করত।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের গুরুত্ব:

  • ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার ডিজিটাল কম্পিউটারের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল। এটি প্রথমবারের মতো মেকানিক্যাল এবং বৈদ্যুতিক উপাদানের সমন্বয়ে স্বয়ংক্রিয় গণনা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়েছিল।
  • এ ধরনের কম্পিউটার জটিল গাণিতিক এবং বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হতো, যা আগে হাতে গণনা করা হতো এবং তাতে প্রচুর সময় লাগত।
  • পরবর্তী ডিজিটাল কম্পিউটার এবং ইলেকট্রনিক কম্পিউটার তৈরি করতে ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারগুলি গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা এবং ধারণা প্রদান করেছিল।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের সীমাবদ্ধতা:

  • মেকানিক্যাল অংশগুলি ধীরগতির ছিল এবং সেগুলোর ঘর্ষণ ও তাপ উৎপাদনের ফলে রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন ছিল।
  • এগুলো বড় আকারের এবং ভারী ছিল, যার কারণে স্থান এবং বিদ্যুৎ খরচ উভয়ই বেশি হতো।
  • ট্রান্সজিস্টর এবং আধুনিক ইলেকট্রনিক উপাদান উদ্ভাবনের পরে ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের ব্যবহার কমে যায়, কারণ নতুন কম্পিউটারগুলো আরও দ্রুত, ছোট, এবং শক্তিশালী ছিল।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারের উত্তরাধিকার:

  • ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটারগুলো আধুনিক কম্পিউটিং প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করেছিল এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
  • এটি ডিজিটাল এবং ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের বিকাশের পাথ তৈরি করে, যা বর্তমান সময়ের কম্পিউটারের মাইলফলক।

ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কম্পিউটার আমাদের বর্তমান প্রযুক্তি এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি প্রমাণ করে যে কীভাবে মেকানিক্যাল ও বৈদ্যুতিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে স্বয়ংক্রিয় গণনা ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হয় এবং এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের আরও উন্নত কম্পিউটিং প্রযুক্তির দরজা খুলে যায়।

Content added By
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion